
জুনায়েদ আহমেদ – একজন সফল UX/UI ডিজাইনার
মনে রাখতে হবে এটা অনলাইন, অফ লাইন নয়। আর এখানে আপনি
শুধু বাংলাদেশ না সমগ্র বিশ্বের মানুষের সাথে পাল্লা দিচ্ছেন
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন
আমি জুনায়েদ আহমেদ। একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক্স (UI/UX) ডিজাইনার https://dribbble.com/Junaed_Ahmed বর্তমানে বাংলাদেশের বসুন্ধরা গ্রুপে UI/UX Designer হিসাবে কাজ করছি ।
আপনার পড়াশোনা আর ছেলে বেলা যেভাবে কাটল
সিলেট পুলিশ লাইন্স স্কুলে ২০১০ এ এসএসসি পরীক্ষা, ২০১২ সালে ব্লু- বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সি আর Bsc করেছি Leading University,Sylhet এর CSE Department থেকে। ছেলেবেলা বলতে পারেন আর দশটা স্বাভাবিক ছেলেদের মত কেটেছে।
ছোট বেলায় যা হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হয়ে গেলাম ফ্রিল্যান্সার। কিভাবে ?
আসলে ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনিতে চাকরি করব, আর এর জন্য অনেক চেষ্টাও করেছি বলতে পারেন। ঢাকা পর্যন্ত এসেছি । কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে বাদ পড়েছি। হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। এত দিনের স্বপ্ন …। কিন্তু আসলে অনেক কিছুই স্বপ্ন ছাড়া বাস্তব হয়ে যায়।তাই হঠাৎ করে কিভাবে জানি ফ্রিল্যান্সিয়ের খাতায় নিজের নাম টা লিখিয়ে ফেললাম। নিজেও জানিনা ।
একজন মানুষের উক্তি, যা আমাকে বড় হতে সাহায্য করেছে।
আসলে অনেকেই আছে এর মধ্যে তবে, বলতে গেলে সবার আগে বলতে হয় আদনানের কথা। ও আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে উৎসাহ দিত।ওর প্রতিটা কথায় আমি ইন্সপায়ার পাই।
ফ্রিল্যান্সিং-এ আসার মাঝে যে মানুষটি আমাকে সাহায্য করেছে (বাবা/মা )
আসলে আমার মা-বাবা দুইজন-ই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। ২০১৩ সালে যখন আমি আদনানের সাথে ওর অফিসে যেতাম, দেখা যেত অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা কিংবা ১২টা হয়ে যেত। অনেক ফামিলিই আছে এই বিষয়টা সহজে নিবেন না, কিন্তু আমার মা-বাবা আমাকে বিশ্বাস করতেন আর আমাকে সাপোর্টও দিয়েছেন, যে কারণে আমি এত দূর এগিয়ে আসতে পেরেছি। আসলে প্রতিটা মা-বাবারই উচিত সন্তানদের পছন্দকে বাস্তবে রুপান্তর করতে সাহায্য করা।
ফ্রিল্যান্সিং এর যার কাজ থেকে উৎসাহ পাই।
আসলে ছোট বেলার স্বপ্নটা বাস্তব হয়নি বলে হতাশ ছিলাম। তখন কলেজ লাইফে একজনের সাথে পরিচিত হই, আদনান। ও আগের থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করত। আমাকে এই সেক্টরে আসতে বলত।আমি ওর কাজ দেখতাম। এরপর রায়হান ভাইয়ের সাথে পরিচয়। তখন কম্পিউটার নিয়ে টুকটাক ঘটাঘাটি আর সিলেটের সব ফ্রিল্যান্সিং মিট-আপের অংশগ্রহন করতে শুরু করলাম।কমিনিউটি থেকে অনেক কিছু পাওয়া যায়,আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সবার মতামত আর কাজ দেখে উৎসাহ পাই। এরপর লাইফের Goal হিসাবে এটাকেই বেছে নেই। তবে আদনান আর রায়হান ভাইয়ের হেল্প ছাড়া হয়ত আমার এতদূর আসা হত না।
ফ্লিল্যান্সিং-এর প্রথম কাজ আর আপনার অনুভূতি যদি বলতেন।
শুরুর দিকে কাজটা যদিও অল্প পরিমানের ছিল। তবুও জীবনের প্রথম কাজ, যেদিন ক্লাইয়েটের নক পাই খুব খুশি লাগছিল। কাজ শেষ করে দিয়ে কিছু ডলারও ইনকাম করি। তখন মনে হচ্ছিল আমি পেরেছি , আমি পারব। আমি আর কিছু একটা করতে পারব। আসলে ঐদিনের অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারব না, সরত্যি খুব বেস্ট ছিল।
আপনি তো CSE বিভাগের ছাত্র সেক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ফ্রিল্যান্সিং এ আসতে আসলে সাইন্স বেকগ্রাউন্ডের প্রয়োজন পড়ে না। আপনি কি করছেন, কি পারেন সেটা হল মূল কথা। তবে ফ্রিল্যান্সিং-এ ইনকামে চিন্তা থেকে আপনাকে বেশি চিন্তা করতে হবে আপনি কতটা পরিশ্রমি এবং কাজকে কতটা ভালবাসেন। তবে হ্যা, আপনাকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, প্রতিনিয়ত-ই জানার উপরে থাকতে হবে। বর্তমানে বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে , কি ব্যবহার হচ্ছে বেশি, কি হচ্ছে না, সব জানা থাকা চাই। তবেই এই ফ্রিল্যান্সিংটা কে পেশা হিসাবে নিতে পারেন আপনি। আর এই পেশাটা সব থেকে মজাদার পেশা। এখানে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। বসের কোন ঝারি নেই। আপনার যখন খুশি কাজ করতে পারছেন। ইচ্ছা হলে ঘুরলেন, খেললেন, কাজ করলেন।
কাজ করতে করতে যদি বিরক্ত লাগে তখন আপনি কি করেন?
যখন বিরক্ত লাগে তখন মুভি দেখি, না হয় হাটতে বের হই। হাটার মাঝেই বিরক্তটাকে দূর করে দেই। মাঝে মাঝে POOL খেলি। তবে বিরক্ত সবসময়-ই যে লাগে তা না। এই সেক্টরে প্রতিটা ক্লায়েটের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখার থাকে। তাই বিরক্তির সময়টুকুও পাওয়া যায় না।
আপনি তো গ্রাফিক্স ডিজাইনার সেদিক দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং-এ গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
প্রতিনিয়ত জানার উপরে থাকুন, আর স্কিল ডেভেলাপ করেন। এখানে অল্প স্কিল নিয়ে বেশি দিন টিকা যাবে না। আমি এখনো স্কিল ডেভেলাপ করছি। লেগে থাকুন, কাজকে ভালবাসুন। নিজের প্রোটফলিও ভাল করে বিল্ড-আপ করতে হবে। ক্লায়েণ্ট এমনি এমনি কাউকে কাজ দেয় না। কাজ পাওয়ার জন্য বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। যে কাজটা আপনি জানেন আপনি পারবেন না, ঐ কাজটা না নেয়াই ভাল। তবে যদি মনে করেন স্কিল ডেভেলাপ করে কাজটা করে দিতে পারবেন তাহলে কাজটা নিন। কাজের পাশাপাশি আপনার স্কিলও ডেভেলাপ হয়ে গেল। হতাশা আসতেই পারে জীবনে, সেক্ষত্রে যে কাজ ছেড়ে দিতে হবে তা কিন্তু নয়। আপনার স্কিল আর কাজের মান বাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
স্কিল বাড়ানোর জন্য কি করতে হবে?
স্কিল বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ঘটাঘাটি করতে হবে। আপনার পরিচিত যারা এই সেক্টরে ভাল করছে তাদের পরামর্শ নিতে পারেন। তাদের কাজ থেকে জানতে পারেন কিভাবে কি করলে ভাল হবে? তবে তারাও যে আপনাকে সব সময় সাহায্য করবে তা কিন্তু নয়। তাই আপনার নিজেকেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। গুগুল আছে ,ইউটিউব আছে। এদেরকে ভাল বন্ধু বানান। গুগুলে ঠিক মত আপনার সমস্যার কথা বুঝাতে পারলে সেই আপনাকে সমাধানের পথ বের করে দিবে।এছাড়াও দেশে অনেক ব্লগ আছে সেগুলো পড়ুন আর কমিউনিটির সাথে থাকুন। আর হ্যা নিজেকে কখনও বড় মনে করবেন না। ধরে নিবেন আপনি এখানে কিছুই পারেন না , জানতে আসছেন। সেক্ষত্রে অনেকের কাছ থেকেই অনেক কিছু জানতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে অনেকে নানান সমস্যায় পড়ে, এর থেকে সমাধান কি করে পেতে পারে? আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলুন।
ঐ যে বললাম বড় ভাইদের হেল্প নিতে পারেন। যারা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তাদের পরামর্শ নিতে পারেন। আর ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে আইডিয়া পেতে প্রচুর পরিমান ডিজাইন দেখতে পারেন। ভাল ভাল ডিজাইনাদের ডিজাইন দেখবেন। কে কিভাবে কোন সেকশন নিচ্ছে ,কালার, হাইট সব। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা অনলাইন, অফ লাইন নয়। আর এখানে আপনি শুধু বাংলাদেশ না সমগ্র বিশ্বের মানুষের সাথে পাল্লা দিচ্ছেন। তাই তাদের সাথে চলতে হবে। যে ডিজাইনটা আপনার ভাল লেগেছে তা অন্য জনের ভাল নাও লাগতে পারে। তাই আপনাকে সবার পছন্দ বুঝতে হবে। আর কাজের সাথে লেগে থাকতে হবে আপনাকে।
সবশেষে, আপনার ব্যক্তিগত দিক থেকে ফ্রিল্যান্সিং ও আপনার কিছু কথা যদি শেয়ার করতেন।
দেখেন কন কাজই সহজ নয়, প্রতিটা কাজে কঠিন থেকে কঠিন ধাপ পেরিয়ে আসতে হয়। যখন কোন কাজ শুরু করবেন তখন-ই কিন্তু ব্যর্থতা আসবে বেশি। কিন্তু এক পর্যায়ে আর আপনাকে ব্যর্থতা গ্রাস করতে পারবেনা। তাই ব্যর্থতায় হতাশ হবেনা। স্বপ্ন ভেঙে গেলে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করুন। তবে হ্যা ঘুমিয়ে না ,জেগে থেকে স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করুন। সাফল্যর জন্য প্রথমে আপনাকে ছুটতে হবে, এরপর সাফল্য-ই আপনার পিছনে ছুটবে।
স্বাক্ষাতকার গ্রহণে ঃ মডারেটর অফ ফ্রিল্যান্সার স্টোরি
ফেইসবুক ফ্রিল্যান্সিং গ্রুপঃ ফিল্যান্সারস্টোরি
Inspired